হার্ট বাইপাস সার্জারি (সিএবিজি)

হার্ট বাইপাস সার্জারি একটি প্রধান প্রক্রিয়া যার জন্য অ্যানেস্থেশিয়া এবং হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন। পদ্ধতির পরে, রোগীদের রক্ত ​​জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে এবং তাদের রক্তচাপ পরিচালনার জন্য ওষুধ সেবন করতে হবে, সেইসাথে তাদের হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে, যেমন ধূমপান ত্যাগ করা এবং হার্ট-স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ব্যায়াম পরিকল্পনা অনুসরণ করা।

ভারতে অনেক অভিজ্ঞ এবং অত্যন্ত দক্ষ কার্ডিয়াক সার্জন রয়েছে যারা বিশ্বের সেরা কিছু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত হয়েছে। ভারতের হাসপাতালগুলি অত্যাধুনিক সুবিধা এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যা নিশ্চিত করে যে রোগীরা সম্ভাব্য সর্বোত্তম যত্ন পান।

হার্ট বাইপাস সার্জারির কারণ:

হার্ট বাইপাস সার্জারি, বা CABG, তখনই জরুরি হয়ে পড়ে যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত ​​সরবরাহকারী করোনারি ধমনীগুলি প্লাক জমা হওয়ার কারণে সংকুচিত বা ব্লক হয়ে যায় এবং CAD (করোনারি ধমনী রোগ) নামে পরিচিত অবস্থার দিকে পরিচালিত করে।

• গুরুতর করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD): এটি হৃৎপিণ্ডে রক্ত ​​প্রবাহে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে বুকে ব্যথা (এনজিনা) হয়, এবং এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।

• এনজাইনার ব্যবস্থাপনা: যখন ফার্মাকোথেরাপি তীব্র এনজাইনা নিয়ন্ত্রণে বা কম আক্রমণাত্মক কৌশলের জন্য অপর্যাপ্ত হয়, তখন রক্ত ​​প্রবাহ উন্নত করতে এবং ব্যথা উপশমের জন্য CABG নির্দেশিত হতে পারে।

• হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ: যে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তিনি রক্তের ব্লকেজ বৃদ্ধি পেলে রক্ত ​​প্রবাহের নতুন পথ তৈরির জন্য CABG করিয়ে আবারও আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম হতে পারেন।

• একাধিক অবরুদ্ধ ধমনী: CABG সাধারণত সেইসব ক্ষেত্রে করা হয় যেখানে দুই বা ততোধিক করোনারি ধমনীতে ব্লকেজ থাকে অথবা যখন বাম প্রধান করোনারি ধমনী উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়ে যায়।

• অন্যান্য চিকিৎসা ব্যর্থ হয়েছে: যদি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা সম্ভব না হয় অথবা এটি ব্যর্থ হয়, তাহলে সম্ভবত পর্যাপ্ত রক্ত ​​প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য CABG প্রয়োজন হবে।

• হৃদপিণ্ডের উন্নত কার্যকারিতা: কিছু ক্ষেত্রে, হৃদপিণ্ডের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য CABG করা হয়।

হার্ট বাইপাস সার্জারির প্রকারভেদ

হার্ট বাইপাস সার্জারি করার পদ্ধতিতে বিভিন্নতা রয়েছে। নীচে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল:

• ঐতিহ্যবাহী করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (CABG): একটি ক্লাসিক ওপেন-হার্ট সার্জারি মানে এই পদ্ধতিটি হৃদপিণ্ডে পৌঁছানোর জন্য একটি বড় বুকের কাটার মাধ্যমে করা হয় এবং রোগীকে একটি হার্ট-ফুসফুস মেশিনের সাথে সংযুক্ত করা হবে।

• অফ-পাম্প করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি (OPCAB): এটি কেবল হার্ট সার্জারি। এই পদ্ধতিতে, হার্ট-ফুসফুস মেশিন ছাড়াই অস্ত্রোপচারের স্থানটিকে স্থিতিশীল করার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় এবং হৃদপিণ্ড এখনও স্পন্দিত থাকে।

• ন্যূনতম আক্রমণাত্মক করোনারি আর্টারি বাইপাস (MICAB): এতে ছোট ছোট ছেদ রয়েছে, যার মধ্যে বুকের দেয়ালে ছেদ করা হতে পারে অথবা ব্যথা কমানো এবং দ্রুত আরোগ্য লাভের মতো সুবিধার জন্য রোবোটিকের সাহায্যে করা যেতে পারে।

হার্ট বাইপাস সার্জারির জটিলতা এবং ঝুঁকি

হার্ট বাইপাস সার্জারির জন্য ইঙ্গিতগুলি আরও তদন্ত করা প্রয়োজন। এই ধরনের সার্জারি জীবন রক্ষাকারী তবে এতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, বয়স এবং পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি রয়েছে। সম্ভাব্য জটিলতাগুলি এখানে দেওয়া হল:

• রক্তপাত: রক্তক্ষরণ, যার ফলে অস্ত্রোপচারের সময় বা পরে রক্ত ​​সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে। 

• সংক্রমণ: ক্ষতস্থানে বা বুকে সংক্রমণ হতে পারে।  

• হৃদস্পন্দনের সমস্যা (অ্যারিথমিয়া): অস্ত্রোপচারের পরে অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্য প্রায়শই ওষুধ বা চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

• স্ট্রোক: যদিও বিরল, স্ট্রোক একটি গুরুতর সম্ভাব্য জটিলতা।  

• কিডনির সমস্যা: পূর্বে বিদ্যমান কিডনি রোগ কিডনির কার্যকারিতাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। 

• স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা জ্ঞানীয় দুর্বলতা: কিছু রোগীর স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা মনোযোগের সমস্যাও হতে পারে। 

• রক্ত জমাট: পালমোনারি এমবোলিজম হতে পারে। পায়ে বা ফুসফুসে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে পারে।  

• গ্রাফ্ট ব্যর্থতা: সময়ের সাথে সাথে, বাইপাস গ্রাফ্টের ফলে অন্যান্য হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে। 

• এনেস্থেশিয়ার প্রতিক্রিয়া: প্রক্রিয়া চলাকালীন সদস্যটি অ্যানেস্থেসিয়ার অসঙ্গতি অনুভব করেছিলেন। 

• হৃদপিন্ডে হঠাৎ আক্রমণ: যদিও অস্ত্রোপচারটি নিজেই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে করা হয়, তবুও প্রক্রিয়া চলাকালীন বা পরে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। 

• ফুসফুসের সমস্যা: নিউমোনিয়া বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সহ।  

হার্ট বাইপাস সার্জারির সুবিধা

হার্ট বাইপাস সার্জারি গুরুতর করোনারি ধমনী রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীদের জন্য নিম্নলিখিত উপায়ে সুবিধা প্রদান করে। এর মৌলিক সুবিধা সম্পর্কে আরও কিছু বিশদ এখানে দেওয়া হল।

• এর একটি প্রধান সুবিধা হল হৃদপিণ্ডে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে এনজাইনা হ্রাস পায়। 

• বাইপাস সার্জারিতে লক্ষণগুলি উপশম হয়, যার ফলে আরও বেশি শক্তির মজুদ এবং আরও বেশি কার্যকলাপের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জীবনের মান উন্নত হয়। 

• এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বন্ধ ধমনীর চারপাশে নতুন রক্তের রাস্তা তৈরি করা হয়, যার ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলিতে তাজা অক্সিজেন পৌঁছায়। 

• অনেক রোগীর কাছে, বাইপাস সার্জারি ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে, বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে। 

• কিছু ক্ষেত্রে, এই ধরনের পদ্ধতি হৃৎপিণ্ডের রক্ত ​​পাম্প করার দক্ষতা উন্নত করবে। 

• কিছু রোগী সাধারণত শুধুমাত্র চিকিৎসার তুলনায় এই অস্ত্রোপচার থেকে বেঁচে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ ভালো। 

• বেশিরভাগ রোগী দেখেন যে অস্বস্তি কমে যাওয়ার পরে তারা অনেক বেশি শারীরিক কার্যকলাপ পুনরায় শুরু করতে পারেন। 

হার্ট বাইপাস সার্জারি পুনরুদ্ধার

হার্ট বাইপাস সার্জারির পর আরোগ্য লাভ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণ প্রত্যাশা এবং নির্দেশিকা নিম্নরূপ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। 

• অস্ত্রোপচারের পর ১-২ দিন আইসিইউতে থাকতে হবে। টিউব/ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, তরল এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলির জন্য পর্যবেক্ষণ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে ব্যথা ব্যবস্থাপনা। 

• হাসপাতালে থাকার স্বাভাবিক সময়কাল প্রায় এক সপ্তাহ, তবে পুনরুদ্ধার বা জটিলতার কারণে এটি দীর্ঘায়িত হতে পারে। ব্যায়াম এবং শিক্ষার মাধ্যমে কার্ডিয়াক পুনর্বাসন শুরু করুন।

• প্রাথমিক পর্যায়ের আরোগ্য প্রক্রিয়ায় (১-৬ সপ্তাহ), সকলের বিশ্রাম, হালকা কিছু কার্যকলাপ, ক্ষতের যত্ন এবং ব্যথার ওষুধের উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত।

• ৬ষ্ঠ-১২তম সপ্তাহ, কার্যকলাপ বৃদ্ধি করুন, গাড়ি চালানোর কথা বিবেচনা করুন, হালকা কাজে পুনরায় নিযুক্ত হন এবং পুনর্বাসনের উপর মনোযোগ দিন, যখন হৃদপিণ্ড প্রায় ১২ সপ্তাহের মধ্যে তার শক্তি এবং সহনশীলতা পুনরুদ্ধার করে। 

• খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ধূমপান না করা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ সহ গুরুত্বপূর্ণ জীবনযাত্রার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

হার্ট বাইপাস সার্জারি, যা করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (CABG) নামেও পরিচিত, একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা করোনারি ধমনী রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। হার্ট বাইপাস সার্জারি করার পদ্ধতি:

• অ্যানাসথেসিয়া: অস্ত্রোপচারের সময় রোগী অচেতন এবং ব্যথামুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে জেনারেল অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়।

• কুচকে: অস্ত্রোপচারের শুরুতে সার্জন হৃৎপিণ্ডে প্রবেশের জন্য বুকে একটি ছেদ তৈরি করেন।

• একটি সুস্থ রক্তনালী সংগ্রহ করা: একটি সুস্থ রক্তনালী রোগীর শরীরের অন্য অংশ থেকে নেওয়া হয়, সাধারণত পা বা বুক।

• কলম প্রস্তুত: তারপর সুস্থ রক্তনালীকে বাইপাস গ্রাফ্ট হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

• অবরুদ্ধ ধমনী বাইপাস করা: সার্জন তারপর ব্লকেজ বাইপাস এবং হৃদয়ে রক্ত ​​​​প্রবাহ পুনরুদ্ধার করতে ব্লক করা ধমনীতে সুস্থ রক্তনালীকে গ্রাফট করে।

• ছেদ বন্ধ করা: একবার বাইপাস সম্পূর্ণ হলে, সার্জন ছেদটি বন্ধ করবেন এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণের জন্য একটি ড্রেন স্থাপন করবেন।

• রিকভারি: পদ্ধতির পরে রোগীকে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং রক্ত ​​জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে এবং তাদের রক্তচাপ পরিচালনা করতে ওষুধ সেবন করতে হবে। তাদের হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে, যেমন ধূমপান ত্যাগ করা এবং হার্ট-স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ব্যায়াম পরিকল্পনা অনুসরণ করা।

হার্ট বাইপাস সার্জারি একটি প্রধান প্রক্রিয়া এবং কিছু ঝুঁকি বহন করে, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।